Posted in Bengali, short shory

এক মুঠো আকাশ…..

চিরন্তনা সেনগুপ্ত সরকার

আর্যর বিয়ের আর দিন চারেক বাকি। বাবার অবর্তমানে বিয়ের সম্পূর্ণ দায়িত্ব পড়েছে তার ভাই অর্কর উপর।  প্যারিসে নিজের রিসার্চ থেকে এক মাসের ছুটি নিয়ে কলকাতা চলে এসেছে অর্ক বেশ কিছুদিন হলো। মায়ের পক্ষে একা হাতে পুরোটা সামলানো সম্ভব হচ্ছিলো না আর । যমজ ভাইয়ের বিয়ের আয়োজনে কোনো ফাঁক রাখতে চায়না সে।  ঠিক বাবা থাকলে যেরকম আয়োজন হতো , তেমনটি করার চেষ্টা করছে অর্ক । এত পরিশ্রম যাচ্ছে সারাদিন বলেই হয়তো আজ  সকালে উঠতে অনেকটা দেরি হয়ে গেল তার।  আজ মা আবার কল্যাণীতে মামাবাড়ি যাবে। ওদের কার্ড দিয়ে আজকের দিনটা ওখানে কাটিয়ে কাল ফিরবে। দুই ভাই আজ বাড়িতে একা। বিয়ের পর দুজন কি আদৌ এরকম সুযোগ আর পাবে একসাথে সময় কাটানোর ? তাই দু’ভাই  ঠিক করেছে আজ জমিয়ে আড্ডা দেবে। সারাটাদিন একসাথে কাটাবে। 

সাইড টেবিল থেকে চশমাটা  পরে ঘড়িটা দেখে নিলো অর্ক। প্রায়  ৯.৩০ টা ।  কেউ তাকে আর ডাকেনি সকালে। মায়ের বেরোনোর সময় তো হয়ে গেল প্রায়।  ফ্রেশ হয়ে নিচে নামার সময় সিঁড়ি থেকে মেঘনার গলার আওয়াজ পেলো। মেঘনা আজ এখানে? হটাৎ ? মেঘনা ওর ভাইয়ের হবু স্ত্রী। সবাই একই ক্লাসে পড়তো ওরা স্কুলে, সেই থেকে আর্য আর মেঘনার প্রেম, আজ দীর্ঘ চোদ্দ বছর পর সেই প্রেম পরিণতি পেতে চলেছে। কয়েক ধাপ সিঁড়ি দিয়ে নামতেই আরেকটা গলার আওয়াজ পেলো, খুব মিষ্টি একটা গলার আওয়াজ, খুব পরিচিত, খুব কাছের। আট বছর পর সেই আওয়াজটা শুনে হটাৎ গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো অর্কর। এই আওয়াজের সাথেই তো কত রাত্রি ফোনে গল্প করতে করতে ঘুমিয়েছে সে, কত গান গেয়েছে স্টেজে, কত ঝগড়া করেছে আর তারপর ফোনে সরি বলেছে। এই আট বছরে সে তো এই আওয়াজটাকে ভোলে নি,  কিন্তু আফসোস, আওয়াজটা যে তাকে ভুলে গিয়েছে !

 

সিঁড়ি তে সবার অলক্ষ্যে দাঁড়িয়ে নিজেকে শান্ত হওয়ার সময় দিলো সে। এতদিন পরে নিজের দুর্বলতাটা মেলে ধরতে সে রাজি নয় একেবারেই। বেশ কয়েক মিনিট নিজেকে শক্ত করে সিঁড়ি দিয়ে লিভিং রুমে প্রবেশ করলো সে। মা আর আর্যর সাথে সোফায় বসে গল্পে মশগুল রিয়া আর মেঘনা, ঠিক আগের মতো। কয়েক সেকেন্ড রিয়াকে ভালো করে দেখলো অর্ক, স্কুলে পড়া সেই টমবয়টা এখন সালোয়ার কামিজ, হাইলাইট করা লম্বা খোলা চুল আর ঝোলা কানের দুলের পিছনে হারিয়ে গেছে  কোথাও। এই মেয়েটা তার সাথে ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে সারা স্কুল জীবন মারামারি করে এসেছে ভাবতে পারবে কেউ ? মুখশ্রীটা   কি এতটাই সুন্দর ছিল না বয়েসের সাথে সৌন্দর্যটাও বেড়ে গাছে তার ? এখনও কি আগের মতো গান গায়ে সে ? চকলেট খায়? কার্টুন ভালোবাসে ? এখনো কি ডিটেক্টিভ গল্পে ডুবে থাকে?  হাজারটা প্রশ্ন  মনে একসাথে ভীড় করে এলো অর্কর। 

 

তাকে লক্ষ্য করে হটাৎ আর্য ডেকে ওঠায় এক ঝটকায়ে বাস্তবে ফিরে এলো অর্ক। এবার এক্টিং এর পালা। স্কুল  জীবনে করা যত নাটকে যেটুকু অভিনয় শিখেছে সে, এবার তা কাজে লাগানোর সময়। অল্প হেসে এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়ালো রিয়ার দিকে। 

– হাই, অনেক দিন পর, কেমন আছিস?

– এই তো ভালো আছি, তোর খবর বল। 

হেসে উত্তর দিলো রিয়া। অর্ক বুঝলো নিজের শ্রেষ্ঠ অভিনয় করার জন্যে উঠে পরে লেগেছে রিয়াও। মনে মনে ভাবলো “চ্যালেঞ্জ একসেপ্টেড “।

 

মেঘনা বলে উঠলো পাশ থেকে – “দেখ, আট বছর পর খুঁজে বের করেছি রিয়াকে। কত কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছে।  কিন্তু একবার যখন পেলাম পরিষ্কার জানিয়ে দিলাম, আমার সেই ছোটবেলার বেস্ট ফ্রেন্ড না এলে আমি বিয়ের পিঁড়িতে বোসবই না।  জেদ  করে নিয়ে এলাম দেখ ওকে।”

 

– “বেশ করেছিস, কেন  রে কাকীমাটার কথাও এতদিন মনে পড়লো না একবার ও ?” ; মা বললো ।

 
– “সত্যি রিয়া, কত স্মৃতি বলতো আমাদের চার জনের ! এই শহরে একসাথে বড় হলাম।  এতদিন একটা ফোন পর্যন্ত করলি না ? কেন বলতো?”
 

আর্যর  শেষ প্রশ্নটার উত্তর সবাই জানতো। অর্কর গায়ে আবার কাঁটা দিয়ে উঠলো। রিয়া অবশ্য খুব সহজ ভাবেই উত্তরটা  দিলো ;

“বাবা বোম্বে ট্রান্সফার হয়ে গেল, আমিও পুনে চলে গেলাম পড়তে। তার পর চলে গেলাম লন্ডন হাইয়ার  স্টাডিজের জন্যে । এতো ব্যস্ততার মধ্যে আর কলকাতা আসাই হলো না।  তোমাদের সবার কথা খুব মনে পড়তো।”

 

রান্নার মাসি কে রিয়া আর মেঘনার জন্যে খাবারের ব্যবস্থা করতে বলে মা রওনা হলো মামা বাড়ির দিকে। মা চলে যাওয়াতে আবার সেই চারজনের দলটা তৈরী হয়ে গেল আগের মতো। বাকি তিনজন পুরোনো দিনের স্মৃতিচারনে ব্যস্ত। রিয়া এত স্বাবাবিক, সহজ ভাবে গল্প করছে যেন আট বছরটা আট দিন মাত্র। এতটাই কি ভালো অভিনেত্রী সে না সত্যি কিছু যায় আসে না তার? এত বছরে নিশ্চই তার জীবনে কেউ এসে গেছে? তার জন্যেই নিশ্চই এখন এত সাজ, এত পরিবর্তন? হঠাৎ অভিমান, ঈর্ষায় মাথা ঝা ঝা করে উঠলো তার।  খিদে তার অনেক্ষনই উড়ে গেছে, তাও উঠে নিজের জন্যে এককাপ কফি  বানালো।  স্ট্রং কফি আর মেয়েদের দামি পারফিউমের আড়ালেও সেই পরিচিত গন্ধটা আস্তে আস্তে পুরোনো দিনে ঠেলে নিয়ে গেল তাকে, সেই ছোটবেলার স্মৃতিগুলোর কাছে যেগুলোকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও এখনো আঁখরে ধরে বসে আছে সে। 

 

*****

 

চার বন্ধু প্রায় একসাথে বড় হয়েছিল তারা। একই স্কুল, তার পর একই কলেজ। কোনোদিন কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে ওরা শেখেনি। রিয়া তো ওদের সাথে মিশে নিজেকে প্ৰায়ে ছেলেই ভাবতো। ক্রিকেট খেলতো ওদের থেকেও ভালো, ক্যারাটের মারে দুই ভাইকে নাজেহাল করতো, অর্ক যখন প্রথম বাইক কিনলো, রিয়া তার আগে সেটা চালাতে শিখে ফেলেছিলো আর বাইক নিয়ে সারা কলকাতা ঘুরে বেড়াতো। তাদের কলেজ ব্যান্ডে গান গেয়ে পাড়া মাতাতো। এই সব বাইক  নিয়ে মারামারি, ফুচকায়ে লংকার পরিমাণ নিয়ে ঝগড়া ঝাটি, নতুন গান লেখার প্রচেষ্টা আর গল্পের বই আর ক্লাসনোটস আদান প্রদানের  ফাঁকে কখন যে অর্ক এই ব্যতিক্রমী মেয়েটিকে ভালোবেসে ফেলেছিলো, নিজেও বুঝতে পারেনি। একদিন কলেজের শেষে বারান্দায় বসে ফেস্টের আলোচনা করার ফাঁকে ভয় ভয় নিজের মনের কথা যখন জানায় তাকে, জীবনে প্রথম দস্যি মেয়েটার মুখে একটা লাল আভা ফুটে উঠতে  দেখেছিলো সে। গোধূলি লগ্নে ওই সলজ্জ হাসিটা আজও মনে দাগ কেটে আছে অর্কর।  

 

তার পর তিন বছর কেটেছিল স্বপ্নের মতো, রাতের পর রাত  ফোন, গল্পের বইয়ের পাতার আড়ালে চিঠি ও আনাড়ি হাতের কবিতা, কলেজের ক্লাস কেটে লুকিয়ে সিনেমা, দূর্গা পুজোর অঞ্জলীর ফাঁকে আড়চোখে একে অপরকে দেখে মুচকি হাসা, সরস্বতী পুজোয় রিয়াদের ফ্ল্যাটের বিশাল প্রতিমা রাত জেগে সাজানো, বইমেলায় পাশাপাশি বসে বেনফিশের চপ খাওয়া, রিয়ার প্রথম বানানো পাথরের মতো শক্ত কেকটাকে খেয়ে প্রশংসা করা, বার্থডে আর ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে স্পেশাল গিফটের খোঁজে রাতকে দিন করা…..সবই এখন স্মৃতি।

 

এই স্পষ্ট বক্তা, মুক্ত মনের মেয়েটাকে অর্ক ভালোবাসতে পেরেছিলো ঠিকই, কিন্তু নিজের কাছে ধরে রাখতে পারেনি। হয়তো ধরে রাখার প্রচেষ্টাটাই ছিল তার সবচেয়ে বড় ভুল। কোথাও একটা রিয়ার স্বপ্নগুলোর মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল সে, তাই হয়তো তার থেকে দূরে রিয়ার পুনে পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা মেনে নিতে পারেনি অর্ক । আজন্মের সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরতে শুরু করলো। দূরত্ব, অহংকার, আত্মাভিমান যেন খুঁড়ে খুঁড়ে খেতে লাগলো সম্পর্কটাকে।  একদিন ধস নামলো এবং তার গতিতে ছিটকে আলাদা হয়ে গেল রিয়া সবার থেকে। কোনোদিন পরস্পরকে খোঁজার চেষ্টাও করেনি তারা। বরং নিজেদের আরো দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে নিজের দেশ, চেনা শহর, পরিচিত  মানুষগুলোর থেকেও দূরে চলে গেছে  তারা। আজ বিদেশের মাটিতে দুজনে আবার  করে গড়ে তুলেছে তাদের জগৎ – নতুন কিন্তু একটা অসম্পূর্ণ জগৎ। 

 
 *****
 

ঘন্টা দেড়েক আড্ডা দেয়ার পর মেঘনা জানালো তার এবার বাড়ি ফেরা উচিত। যোধপুর পার্ক এর পুরোনো ফ্ল্যাটটাতে রিয়া এখন এসে উঠেছে কদিনের জন্যে। কিছুটা জোর করেই আর্য অর্ককে পাঠালো গাড়িতে রিয়াকে ছেড়ে আসতে। সারা দুনিয়া ঘোরাঘুরি করা এই মেয়েটি যে ট্যাক্সি করে  দিনেরবেলা ঠিক বাড়ি পৌঁছে যাবে, সেটা জানতো অর্ক। কিন্তু যখন দেখলো রিয়াও বিশেষ প্রতিবাদ করছে না তার থেকে লিফ্ট নিতে, তখন সে রাজি হয়ে গেল। নিজের সম্পূর্ণ মনোযোগ স্টিয়ারিং হুইলের  দিকে উপনিবিষ্ট করলো অর্ক। গাড়ির মধ্যেকার দম বন্ধ করা নিস্তব্ধতা দূর করতে রেডিওটা চালিয়ে  দিলো সে। অনুপম রায়ের  সদ্য রিলিজ হওয়া একটি গান  ভেসে এলো –

   

“ফুটকড়াই, অ্যান্টেনা, হাফ চিঠি, হাফ প্যাডেল

আয়না আর জলপরীর গল্প বল

বন্ধু চল…

সাপ লুডো, চিত্রহার, লোডশেডিং, শুকতারা

পাঁচসিকের দুঃখদের গল্প বল

বন্ধু চল

বন্ধু চল… বলটা লে.

রাখবো হাত তোর কাঁধে

গল্পেরা এই ঘাসে 

তোর টিমে তোর পাশে” 

         

গানটা শুনে কিছুটা আনমনা হয়ে গিয়েছিলো অর্ক। হঠাৎ রিয়ার কথায় যেন এক যুগের নিস্তব্ধতার বাঁধ ভাঙলো।

– “তোর কি বাড়ি ফেরার তাড়া  আছে?” 

 

– “না, কেন বলতো? ” ; খুব সাবধানে জিজ্ঞাসা করলো অর্ক।

 

– “কলকাতাটা একটু ঘুরে দেখতে ইচ্ছে করছে।”

 

অল্প হেসে রিয়ার বাড়ির দিক থেকে গাড়িটা ঘুরিয়ে দিলো অর্ক।  অনেক দিন পর চেনা বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে প্রিন্সেপ ঘাটের হাওয়া খেলো, সেন্ট পলসের নিস্তব্দতায় দুজন মনে মনে প্রার্থনা করলো যেন এই দিনটা শেষ না হয় কোনোদিনো,  ভিক্টোরিয়ার বাইরে গল্প করতে করতে  বিট নুন দিয়ে বাদাম ভাজা খেলো, বইপাড়া ঘুরে তাদের সেই ছোটবেলার প্রিয় লেখকদের সেকেন্ড হ্যান্ড ডিটেক্টিভ নভেল কিনলো, গড়িয়াহাটের ভীড় ঠেলে প্রচন্ড দাম দর করে রিয়া কানের দুল কিনলো এবং পড়ন্ত বিকেলে যখন প্রচন্ড খিদে পেলো, তখন পার্ক স্ট্রিটের সেই সবচেয়ে প্রিয় রেস্তোরাটার শীতল আলো আঁধারিতে গিয়ে বসলো দুজনে।  

 

চাইনিজ খেতে খেতে কথার ছলে দুজন দুজনকে জমে থাকা নানান প্রশ্ন করতে লাগলো।  শেষ পাতে যখন বিশাল আইস ক্রিমটাতে চামচ ডুবালো রিয়া, তার চোখে মুখে ফুটে ওঠা আনন্দ দেখে অর্ক বুঝলো বাইরের খোলসটার ভিতরে লুকিয়ে থাকা  মেয়েটি একফোঁটাও বদলায় নি। সাথে সাথে কোথাও একটা সেই সুপ্ত ইচ্ছেগুলো আবার মাথা চারা দিয়ে উঠতে শুরু করলো তার মনে।

দিনের শেষে যখন রিয়াকে তার বাড়ি নামিয়ে দিলো অর্ক , গাড়ি থেকে নামার আগে হটাৎ বলে উঠলো রিয়া “জানিস অর্ক,  সত্যি কথা বলতে এই দিনটার লোভেই কলকাতা ফিরলাম এতদিন পরে। ভাবতে পারিনি এতো কিছুর পর আমার এই অন্যায় আব্দারটা  তুই রাখবি। থ্যাংক ইউ।”

কি উত্তর দেবে ভেবে পায়নি অর্ক। মাথা নিচু করে একটু হেসেছিলো মাত্র । 

 

*****

 

শীতের রাতে ডিনার করে দুই ভাই এক লেপের ভিতর ঢুকে অনেক রাত অব্ধি গল্প করলো সেইদিন। আর্য আর মেঘনা যে আজ ইচ্ছে করেই রিয়াকে ওদের বাড়ি নিয়ে এসেছিলো তা বুঝতে বাকি নেই অর্কর। অনেক রাতে যখন আর্য ঘুমিয়ে পড়লো, ল্যাপটপটা খুলে এই প্রথম ফেসবুকে রিয়াকে খুঁজলো অর্ক। অনেক সাহস সঞ্চয় করে একটা মেসেজ পাঠালো – “হাই” । যখন কয়েক মিনিটের মধ্যেই উত্তরে আরেকটা “হাই” এলো, অর্ক বুঝলো রাতের ঘুম তার একার ওড়েনি। সেই রাতে বহুযুগ পর মেসেজ আদান প্রদানের মাধ্যমে কথা বলতে বলতে আবার ভোর করলো দুজন। ল্যাপটপ রেখে একটা নিবিড় ভালোলাগার অনুভূতি নিয়ে শুয়ে পড়ার আগে কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে একবার দেখে নিলো ঘুমে অচৈতন্য ভাইটার মুখটা । ছোটোখাটো কিছু অমিল কে উপেক্ষা করলে ঠিক যেন তার নিজের প্রতিচ্ছবি। তাই হয়তো ওর এতদিনের না বলা কথা, একাকীত্ব আর চেপে রাখা দীর্ঘশ্বাসগুলোকে এত সহজে বুঝে ফেলেছিল আর্য। গাড়ির থেকে নামার আগে রিয়ার বলা কথাটা আবার মনে পড়লো তার। বয়েস এবং অভিজ্ঞতার সাথে অন্তত এইটুকু বুঝেছিলো সে, আকাশের মেঘের মতো হালকা, বাতাসের মতো মুক্ত মনের এই মেয়েটিকে পেতে গেলে তাকে মুষ্টি বদ্ধ করে রাখার প্রচেষ্টা বৃথা, তাকেও মেঘেদের মতো আর বাতাসের  মতো মুক্ত হতে হবে। ঘুমিয়ে পড়ার আগে জানালার পর্দা সরিয়ে ভোরের আকাশের রক্তিম আভায়ে ভেসে যাওয়া মেঘগুলোর দিকে তাকিয়ে মনে মনে শপথ করলো অর্ক, বহু বছরের অপেক্ষা আর সাধনার পর পাওয়া এই ভালোলাগার অনুভূতিটিকে এবার  আর কোনোদিন  ও হারাতে দেবে না সে। 

*****

2 thoughts on “এক মুঠো আকাশ…..

Leave a comment